ফেলানী, বাবার বড় আদরের নাম; কতটুকু! তা নিশ্চয়ই আমরা কেউ জানি না? যার চোখে মুখে স্বপ্ন ছিল একটি পাখির বাসার মতন ঘর, আলতা রাঙা বরণে কোমরে বিছা পেঁচিয়ে ঘরকুঠো থেকে রান্না পর্যন্ত খেলার মতো করে সাজানো; সকালে মোরগ ডাকে তার ঘুম ভাঙবে, হিজলের ছায়ায় ঢেকে রাখবে সারাদিনের সকল ক্লান্ত গুলো ছোট ছোট অভিমান গুলো থাকবে পুকুরের জলের মতো শান্ত। বাবা বলে ছিল,বুড়ি তোর বিয়ে দেব, এ ভিনদেশী শহর থেকে তার আগেই আমরা বাড়ি যাব। ফেলানীর এ ইটখোলার মাঝে স্বপ্নের জাল বুনা শুরু সেদিনই; সামান্য ভাতে উদর ভরুক আর না ভরুক মেয়েটা তো নিজের ঘরকন্না করবে। তার এমন খুশির দিনে পাড়ার সইরা দুষ্টামি করে তাকে কি বলেছিল আমাদের তা জানা হল না; বিয়ের আগে দেশটায় একবার যেতে হবে, কি আর করার, রক্তে মাংসে কামাই করা টাকা না হয় একটু বেশি নিক দালালগুলো, তবুও তো এই 'দিল্লীর কেতা দুরস্ত' থেকে মুক্তি মিলবে। ওহ হে! লজ্জা কাতর স্বরে ফেলানী ভাবছিল বাবাকে জানাতে- তোমার জামাইর কুলম্বদের এক বেলা দানা পানি খাওয়াতে হবে, আমার সঙ্গে ভরা শীতের তোষক,দুই চারটা হাঁড়ি- বাটি,আর সাথে জামাইর হাতঘড়ি দিতে হবে। সেটা বলা বোধহয় আর সম্ভব হলোনা। কুয়াশার ফাঁকে সে নিজের দেশে ফিরতে চেয়েছিল কিন্তু অগত্যা কাঁটাতারের বেড়া কাল হয়ে দাঁড়ালো,এই যা, বাবা অনায়াসে পার হয়ে ওপারে কিন্তু ফেলানী? ও বাবা! একটু দাঁড়াও, দালালের মই বেয়ে সে দূরত নামতে চায়, তাড়াতাড়ি করো ফেলানী তাড়াতাড়ি! তাড়া দিচ্ছিল দালালরা। ওড়নাটা জড়িয়ে ছিল তারের বেড়ায়, একটু পরে আলো ফুটবে। বাবা আমাকে নিয়ে যাও। মা রে দেখি? গণ্ডগোল, দালাল নেই,নির্বাক বাবা। হঠাৎ একটা বুলেট তেড়ে আসলো, ফেলানী তখন অবোধ এক কিশোরী রক্তে রঞ্জিত দেহ, ঝুলন্ত তার লাশ। দেশের মাটি তো দুরের কথা কোনো রাষ্ট্র তাকে বরণ করে নি। পৌষের কুয়াশা ভেজা বিনা তোষকে মেয়েটা বড় নিথর ভাবে ঝুলিয়ে আছে কয়েকটা বাঁশের মাঝখানে। আর আমরা কতেক অতিথিপরায়ণ ও বন্ধুপ্রতিম সভ্যরা পরে আছি ভারতীয় জামদানি আর তাদের দেয়া ভদ্রতার মুখোশ। আমাদের ফেলানী কারো মেয়ে কিংবা কারো বোন, আমাদের দুর্বলতার সাক্ষী হয়ে পড়ে আছে একাকী, বড় অবহেলায় অযত্নে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার নাহিদ হোসেন
আমি"মা" সংখ্যায় এখানে এসেছি তো এই কবিতা পড়া হয়নি। কিন্তু ক্ষুধা সংখ্যার কবিতা পড়ে এখানে আসলাম। বলতেই হচ্ছে এই ছেলেটা কবিতা মারাত্নক লেখে। ভাইয়া, অনেক দোয়া রইলো।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।